মানবকল্যাণ প্রবন্ধের ৫টি অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর, ৪র্থ পর্ব, এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র প্রকাশিত: ৫:১৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০২৫ প্রবন্ধ : মানবকল্যাণ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন: ‘রাষ্ট্র জাতির যৌথ জীবন আর যৌথ চেতনারই প্রতীক।’ – ব্যাখ্যা করো। উত্তর: ‘মানবকল্যাণ’ প্রবন্ধের আলোচ্য উক্তিটি দ্বারা জাতীয় জীবন ও জাতীয় চেতনার সঙ্গে রাষ্ট্রের যে গুরুদায়িত্বপূর্ণ সম্পর্ক তা বোঝানো হয়েছে। একটি জাতির জীবনযাপন ও চেতনা রাষ্ট্রের কাঠামো অনুযায়ী পরিচিতি লাভ করে। রাষ্ট্র যদি তার নাগরিকদের আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য না করে, তবে রাষ্ট্রও তার প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হয়। অর্থাৎ যে রাষ্ট্র হাত পাতা আর চাটুকারিতাকে প্রশ্রয় দেয়, সে রাষ্ট্র কিছুতেই আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নাগরিক গড়ে তুলতে পারে না। কাজেই রাষ্ট্রের উচিত মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা এবং মানবিক বৃত্তি বিকাশের পথে যথাযথ ক্ষেত্র বা পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। প্রশ্ন: ‘মানবকল্যাণ’ কথাটি কীভাবে সস্তা ও মামুলি অর্থ ধারণ করেছে? উত্তর: মানবকল্যাণের প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধি না করার ফলে ‘মানবকল্যাণ’ কথাটি সস্তা ও মামুলি অর্থ ধারণ করেছে। বর্তমান সমাজে মানুষ ‘মানবকল্যাণ’ কথাটিকে ক্ষুদ্রার্থে ব্যবহার করে থাকে। একমুষ্টি ভিক্ষা দেওয়াকেও তারা ‘মানবকল্যাণ’ বলে মনে করে থাকে। অথচ এতে মানুষের প্রকৃত কল্যাণ সাধিত হয় না, বরং মানব-মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করা হয়। মূলত মানবকল্যাণের প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধি না করার কারণেই আমরা একে সস্তা ও মামুলি বানিয়ে ফেলেছি। ‘মানবকল্যাণ’ অর্থ যে, মানুষের মর্যাদাপূর্ণ অস্তিত্বকে স্বীকার করা, তা আমরা ভুলে গেছে। প্রশ্ন: বিজ্ঞানের অভাবনীয় আবিষ্কারকে ধ্বংসের পরিবর্তে কীভাবে সৃজনশীল মানবিক কর্মে নিয়োগ করা যায়? উত্তর: ‘মানবকল্যাণ’ প্রবন্ধ অনুযায়ী মুক্ত বিচারবুদ্ধির সাহায্যে বিজ্ঞানের অভাবনীয় আবিষ্কারকে ধ্বংসের পরিবর্তে সৃজনশীল মানবিক কর্মে নিয়োগ করা যায়। প্রাবন্ধিক আবুল ফজল তার প্রবন্ধে ‘মানবকল্যাণ’ কথাটিকে মানব-মর্যাদার সহায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস দেখিয়েছেন। তিনি মনে করেন মানুষের মর্যাদাবৃদ্ধি মানবকল্যাণের অন্যতম শর্ত। আর এ ধরনের মানবকল্যাণ বাস্তবায়ন করতে হলে বিজ্ঞানের অভাবনীয় আবিষ্কারকে ধ্বংসের পরিবর্তে সৃজনশীল মানবিক কাজে নিয়োজিত করতে হবে। আর মুক্ত বিচারবুদ্ধির সাহায্যেই কেবল তা সম্ভব। অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার যদি ধ্বংসাত্মক কাজে প্রয়োগ না হয়, তবেই তা মানবকল্যাণের ক্ষেত্র উন্মোচন করবে। প্রশ্ন: আজকের পৃথিবীতে মানবকল্যাণ যেভাবে মানব-অপমানে পরিণত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো। উত্তর: আজকের পৃথিবীতে মানবকল্যাণ মানব-অপমানে পরিণত হয়েছে মানুষের স্বাভাবিক অধিকার আর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ছাড়া দয়া ও করুণার কর্মকাণ্ডের জন্য। ‘মানবকল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক দেখিয়েছেন, বর্তমান পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখা যায় দুস্থ, অবহেলিত, বাস্তুহারা, স্বদেশ-বিতাড়িত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আবার রিলিফ, রিহ্যাবিলিটেশন প্রভৃতি শব্দের ব্যবহারও বাড়ছে। তিনি আরও প্রত্যক্ষ করেন রেডক্রসের মতো সেবাধর্মী সংস্থার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এগুলোকে তিনি এক ধরনের মানব-অপমান বলে মনে করেন। কারণ এসবের মাধ্যমে কখনোই প্রকৃত মানবকল্যাণ সাধিত হয় না। এসব মানুষকে ছোট করে রাখার কৌশল ছাড়া কিছু নয়। সুতরাং মানুষের স্বাভাবিক অধিকার আর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ছাড়া মানবকল্যাণ মানব-অপমানে পরিণত হয়। সমস্যা জিইয়ে রেখে মানবকল্যাণ করা যায় না। প্রশ্ন: হাত পাতা ও চাটুকারিতাকে প্রশ্রয় দেওয়া রাষ্ট্রের পরিণতি ব্যাখ্যা করো। উত্তর: যে রাষ্ট্র হাত পাতা বা চাটুকারিতাকে প্রশ্রয় দেয়, সে রাষ্ট্র কখনোই আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নাগরিক সৃষ্টি করতে পারে না। হাত পাতা বা চাটুকারিতা মানবচরিত্রের অমর্যাদাকর দিক। যে মানুষ বা জাতি এই দুটি কাজকে প্রশ্রয় দেয়, তারা যেন প্রকারান্তরে নিজের বা ওই জাতির মর্যাদাকেই ভূলুণ্ঠিত করে। ফলে ওই ব্যক্তি যেমন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়, তেমনি ওই জাতিও সুনাগরিক সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়। কারণ রাষ্ট্র জাতির যৌথ জীবন আর যৌথ চেতনারই প্রতীক। রাষ্ট্রের এমন পরিণতির কারণে নাগরিকরাও মর্যাদাহীন ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত হয়। লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা SHARES শিক্ষা বিষয়: প্রতীকমানবকল্যাণ