টিভি থেকে বাস্তব জীবন, কেন বউ-শাশুড়ির দ্বন্দ্ব মানুষকে এত টানে

প্রকাশিত: ১১:২০ পূর্বাহ্ণ, মে ১৩, ২০২৫

বছর বিশেক আগে স্টার প্লাস নামের টেলিভিশন চ্যানেলে একটা হিন্দি সিরিয়াল হতো- ‘কিউকি সাস ভি কাভি বাহু থি’, যার অর্থ শাশুড়িও একসময় পুত্রবধু ছিল। ভারতের যৌথ পরিবারে প্রজন্মের পর প্রজন্মে বাড়ির বউদের জীবনযাপন নিয়ে টানা আট বছর চলেছিলো এই ধারাবাহিক নাটকটি। সেই সময়ে ও তার পরেও বিভিন্ন দেশি বিদেশি সিরিয়ালে মূল বিষয়বস্তু ছিলো ‘বউ-শাশুড়ির দ্বন্দ্ব’।

এদিকে আমাদের দেশের বাড়ির বউ-শাশুড়িরা সারাদিনের মনোমালিন্য ভুলে সন্ধ্যাবেলায় এক হয়ে বসে যেত এসব কাল্পনিক চরিত্রের ঝগড়া-বিবাদ দেখতে। আদর্শ বউয়ের চরিত্রে থাকা সেসব পুত্রবধুদের পক্ষ নিয়ে চোখের চল ফেলতো অনেকে। পরিবার ভেদে একেকটি সম্পর্কের চেহারা, দায়িত্ব আলাদা হলেও বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক কেন সবসময় তিক্ততার উদাহরণ? আলাদা কী এমন আছে এই সম্পর্কে?

আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ বউ-শাশুড়ির সম্পর্কের এই টানাপোড়েনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে চায়না। একে ‘মেয়েলি সমস্যা’ হিসেবে লেবেল দিয়ে পাশ কাটিয়ে যেতে চায়; যদিও এর পুরোদস্তুর প্রভাব পড়ে পুরো পরিবারের ওপর, এমনকি পুরুষ সদস্যদের ওপরেও।

সম্প্রতি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক সদস্যের অকালমৃত্যুকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়া তার মা ও স্ত্রীকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় গরম হয়ে উঠেছে। অল্প কয়েকটি তথ্যের ভিত্তিতে মানুষ নিজ নিজ কিবোর্ডের সামনে তদন্তে বসে গেছেন। তারা গবেষণা করছেন এ মুত্যুর জন্য কে দায়ী – মা না কি বউ। তবে এই গবেষণায় অংশগ্রহণ করা আমাদের উদ্দেশ্য না। বরং এই একটি দুর্ঘটনা আমাদের এমন একটি সামাজিক সমস্যার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যা প্রায় প্রতিটি পরিবার যুগ যুগ ধরে নীরবে বয়ে নিয়ে চলেছে – ‘বউ-শাশুড়ির দ্বন্দ্ব’।

শাশুড়ির অতীত: আসলে আমাদের এই কৃষিপ্রধান পিতৃতান্ত্রিক সমাজে খুব সম্প্রতি মেয়ে শিশুকে সন্তান হিসেবে দেখার চল শুরু হয়েছে। শহরায়নের পরে নারীরা ‘সম্মানজনক’ উপার্জন করতে শুরু করার পরই এই পরিবর্তনটা হয়েছে। তবু এখনও অনেকে ছেলে সন্তান না থাকাকে একটি অপূর্ণতা মনে করেন। প্রসঙ্গটি হঠাৎ করে অপ্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে? হতে পারে। কিন্তু ভেবে দেখুন। আমাদের মা-খালা, দাদী-নানিদের প্রজম্নে একজন নারীর পরিচয় কেমন ছিল – অমুকের মেয়ে, তমুকের নতুন বউ, তারপর অমুকের মা। অর্থাৎ ওই নারীর স্থায়ী পরিচয় গিয়ে ঠেকতো ‘অমুকের মা’ তে। সেই নারীকে ট্রেনিং দেওয়া হতো কীভাবে নিজের সর্বস্ব বিলীন করে সন্তান পালন করার মধ্যেই তার সফলতা আছে। সন্তানও সারাজীবন মায়ের আচলের নিচেই বড় হয়েছে নিশ্চিন্তে।

এই মায়ের পুত্রসন্তান যখন বড় হয়েছে, নিজে বিয়ে করেছেন (নিজের অথবা পরিবারের পছন্দে), ততোদিনে কাল পাল্টে গেছে। পুত্র এখন তার সঙ্গীকে প্রাধান্য দিতে চায়, তার সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে চায়। তারও আলাদা একটা পরিবার তৈরি হয়ে গেছে। আর এসময় মায়ের সমস্ত পরিচয়ের ওপর হুমকি হয়ে আসে ঘটা করে বিয়ে দিয়ে নিয়ে আসা পুত্রবধু! নিজের অজান্তেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় মায়ের মনে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, ওই নারী তখন আইডেন্টিটি ক্রাইসিস ও রিলেশনশিপ ইনসিকিউরিটিতে ভোগেন।