প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ফিডিং কার্যক্রম নভেম্বরে শুরু হবে: মহাপরিচালক

প্রকাশিত: ৫:১২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৭, ২০২৫

আগামী নভেম্বর থেকে দেশের ১৬৫টি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মোহাম্মদ শামসুজ্জামান।

আজ সোমবার মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান।

মহাপরিচালক বলেন, “আমরা আশা করছি, নভেম্বর মাস থেকেই দেশের ১৬৫টি উপজেলার প্রায় ৩১ লাখ প্রাথমিক শিক্ষার্থীকে ডিম, দুধ, কলা, পাউরুটি, বিস্কুট ও দেশীয় ফলসহ পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হবে। সপ্তাহে পাঁচ দিন তারা এসব খাবার পাবে। ফিডিং কার্যক্রমটি শুরু হবে ১৭ নভেম্বর।”

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দারিদ্র্যের হার অনুযায়ী প্রতিটি জেলা থেকে একটি করে উপজেলাকে বাছাই করা হয়েছে। নির্ধারিত ওই উপজেলাগুলোর প্রতিটি বিদ্যালয়ে খাবার সরবরাহ করা হবে।

তবে বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার সব উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো এই ফিডিং কর্মসূচির আওতায় আসবে বলেও জানান তিনি।

মহাপরিচালক বলেন, “আমরা চাই প্রতিটি স্কুলে মানসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করতে — যাতে শিশুরা ডিম, দুধ, কলা, পাউরুটি, উন্নতমানের বিস্কুট এবং মৌসুমি ফল পায়।”

তিনি আরও বলেন, “শিশুরা যদি মানসম্মত খাবার পায়, তাহলে তারা স্কুলে আরও মনোযোগী হবে, তাদের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে এবং স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হারও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।”

শিক্ষকদের পদোন্নতি ও গ্রেড বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে শামসুজ্জামান বলেন, “প্রধান শিক্ষকদের জন্য দশম গ্রেড ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে এবং তা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। খুব শিগগিরই এটি কার্যকর হবে। সহকারী শিক্ষকদের জন্যও ১১তম গ্রেডের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং বিষয়টি পে কমিশনে আলোচনায় রয়েছে।”

তিনি বলেন, “বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা হাতে পেলেই আমরা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করব। আশা করছি, নভেম্বরের মধ্যেই এ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া সম্ভব হবে।”

মহাপরিচালক আরও বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে ৩২ হাজার সহকারী শিক্ষক চলতি দায়িত্বে বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন, যা তাদের জন্য নিঃসন্দেহে কষ্টদায়ক। একটি মামলার কারণে তারা পদোন্নতি পাচ্ছেন না। আশা করছি, মামলার রায় দ্রুত হবে এবং রায় ঘোষণার পর আমরা এসব পদ পূরণ করতে পারব। এতে সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য হবে, ফলে পুনরায় ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে।”

তিনি বলেন, “আমরা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। তাদের নেতৃত্বগুণ বৃদ্ধির জন্য লিডারশিপ ট্রেনিংসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণ আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

প্রধান শিক্ষকদের ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, “আগে তারা ক্ষুদ্র মেরামত বা স্লিপের জন্য দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে পারতেন। এখন তা বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের আর্থিক ক্ষমতা আরও বাড়ানোর দিকেও আমরা কাজ করছি। নির্মাণ ও মেরামতের কাজে বিল প্রদানের ক্ষেত্রে এখন থেকে প্রধান শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক হবে; উভয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো বিল প্রদান করা হবে না।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই ভবিষ্যতে প্রধান শিক্ষকদের আরও ক্ষমতায়ন করতে। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য সারাদেশে বিদ্যালয় নির্মাণ ও সংস্কারের বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে কোনো জরাজীর্ণ স্কুল থাকবে না।”

শামসুজ্জামান জানান, “প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইন্টারঅ্যাকটিভ ফ্ল্যাট প্যানেল সরবরাহের কাজও শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তিন হাজার প্যানেল বিতরণের পর্যায়ে রয়েছে। আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা অন্তত অর্ধেক বিদ্যালয়কে এই সুবিধার আওতায় আনতে পারব এবং ধীরে ধীরে সব স্কুলেই এটি দেওয়া হবে।”

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে শিশুরা আরও উন্নত ও আধুনিক পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। বর্তমানে স্কুল ম্যানেজিং কমিটিগুলো স্থগিত রয়েছে; ভবিষ্যতে নিয়মিত করার সময় আমরা প্রয়োজনীয় সংস্কারও করব।”