যেভাবে বুঝবেন হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে যাচ্ছেন

প্রকাশিত: ৩:৩৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০২৪

শরীরের তাপ অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে হিটস্ট্রোক হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়।

সাধারণ দীর্ঘসময় ধরে গরম আবহাওয়াতে থাকার ফলে এরকম হয়।

মার্কিন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান মায়ো ক্লিনিক জানাচ্ছে, গরম পরিবেশে থাকার কারণে দেহের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গেলেই হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

দ্রুত ব্যবস্থা নিতে না পরলে মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, বৃক্ক ও পেশির ক্ষতি হয়। আর যত দেরি হবে চিকিৎসা নিতে ততই মৃত্যু ঝুঁকি বাড়বে।

লক্ষণ

হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গের মধ্যে রয়েছে-

দেহে সার্বিক তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে চলে যাওয়া।

গরমে মানসিকভাবে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়া, উল্টাপাল্টা কথা বলা, প্রলাপ বকা, খিঁচুনি ও অজ্ঞান হওয়া।

গরমে অসুস্থ হয়ে বমিভাব বা বমি করা।

দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াতে চামড়ার রং পরিবর্তিত হয়ে লালচে হওয়া।

ঘনঘন শ্বাস নেওয়া।

হৃদপিণ্ডের গতি বাড়া। কারণ দেহ ঠাণ্ডা করতে হৃদযন্ত্র বেশি মাত্রায় কাজ করা শুরু করে।

মাথাব্যথা হওয়া। মনে হবে মাথার ভেতর দপদপ করছে।

প্রতিকার

গরমে কারও মধ্যে এই ধরনের লক্ষণ দেখা মাত্রই যা করতে হবে-

  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ছায়াতে আনতে হবে।
  • অতিরিক্ত জামাকাপড় সরিয়ে দিতে হবে।
  • যে কোনোভাবে দেহ ঠাণ্ডা করার ব্যবস্থা করতে হবে। হতে পারে ঠাণ্ডা পানি ঢালা, গোসল করানো, পানি খাওয়ানো, পানি ছিটানো, ফ্যান বা এসির মধ্যে রাখা। ভেজা কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে মাথা, ঘাড়, বাহুমূল অর্থাৎ শরীরের সমস্ত ভাঁজের জায়গা ভালো মতো মুছে দেওয়া বা পানি ঢালা।

হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার নানান কারণ

  • প্রচণ্ড গরমের মধ্যে থাকা ছাড়াও আরও কারণে মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত কাপড় পরা। যা শরীরের ঘাম হয়ে উবে যাওয়া রোধ করে। ফলে দেহ ঠাণ্ডা হতে পারে না।
  • মদ্যপান করলেও দেহের তাপমাত্রা বাড়ে। যা থেকে হিটস্ট্রোক হতে পারে।
  • পানিশূন্যতা থেকেও হিটস্ট্রোক হয়। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে ঘাম ও প্রস্রাবের কারণে দেহ আর্দ্রতা হারায়।

ঝুঁকি বেশি যাদের

বয়স: শিশুদের কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্র যেমন পুরোপুরি তৈরি হয় না তেমনি পয়ষট্টির ওপরে যাদের বয়স তাদের স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষয় হয়ে থাকে। ফলে তাপমাত্রার সাথে দেহ খাপ খাওয়াতে পারে না। তাই শিশু ও বৃদ্ধদের হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। তাই গরমে তাদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। আর পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করতে হবে।

পরিশ্রম: প্রচণ্ড গরমে দীর্ঘক্ষণ শারীরিক পরিশ্রমের কাজ যারা করে তাদের ঝুঁকি বেশি।

হঠাৎ গরম আবহাওয়া: সাধারণ গ্রীষ্মকাল এক বিষয়। আর গরমকালে ‘হিটওয়েভ’ শুরু হওয়া আরেক বিষয়। আবহাওয়ার এরকম পরিবর্তন দেহ সইতে পারে না। এছাড়া ঠাণ্ডা পরিবেশ থেকে  গরমে যাওয়ার কারণেও হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।

শীততাপ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে না থাকা: ফ্যানের বাতাস হয়ত আরাম দেয় তবে দীর্ঘ সময় ধরে চলা গরম আবহাওয়াতে এসি-ই একমাত্র শরীর ঠাণ্ডা করতে বিশেষ কার্যকর।

ওষুধ ও স্বাস্থ্যসমস্যা: প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ায়, ‘অ্যান্টিডিপ্রেসমেন্ট’ ও রক্তচাপের ওষুধ যারা খান তাদের বেশি সাবধান থাকতে হবে। এছাড়া হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ, ডায়াবেটিস- এরকম দীর্ঘমেয়াদি রোগে যারা ভুগছেন তাদের হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া অতীতে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকলেও সাবধান থাকতে হবে।