বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শিল্পীর সঙ্গে নৃত্যনাট্য করা ফরাসি অভিনেত্রী কানের মূল বিচারক

প্রকাশিত: ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার আকরাম খানের সঙ্গে সংলাপহীন নৃত্যনাট্য ‘ইন-আই’তে পারফর্ম করে নাচেও যে কম যান না দেখিয়ে দিয়েছিলেন অস্কারজয়ী ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোশ। ২০০৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর লন্ডনের লিটলটন থিয়েটারে এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। এটাই ছিল জনসমক্ষে নৃত্যশিল্পী হিসেবে জুলিয়েট বিনোশের প্রথম পরিবেশনা। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে তাদের এই নৃত্যনাট্য। ২০০৯ সালের ১৮ অক্টোবর প্যারিসের থিয়েটার মারিনিতে ছিল এর শেষ মঞ্চায়ন।

নতুন খবর হলো, ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের প্রধান বিচারক থাকবেন জুলিয়েট বিনোশ। ৬০ বছর বয়সী এই তারকা জুরি বোর্ডের সভাপতিত্ব করতে সম্মতি জানিয়েছেন। তার রায়েই স্বর্ণপাম জয়ী চলচ্চিত্র চূড়ান্ত হবে। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) আয়োজকরা এই তথ্য জানিয়েছে।

৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে বিচারকদের প্রধান ছিলেন ‘বার্বি’র পরিচালক গ্রেটা গারউইগ। আমেরিকান এই নির্মাতার স্থলাভিষিক্ত হলেন জুলিয়েট বিনোশ। কান উৎসবের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট একজন নারী অন্য নারীর রেখে যাওয়া মর্যাদাপূর্ণ মূল বিচারকের মশাল বহন করবেন। ১৯৬৫ সালে কানে ব্রিটিশ-আমেরিকান অভিনেত্রী অলিভিয়া ডি হাভিল্যান্ডের পর ১৯৬৬ সালে উৎসবটিতে বিচারকদের প্রধান ছিলেন ইতালিয়ান অভিনেত্রী সোফিয়া লরেন। ছয় দশক পর ফের এমন উদাহরণ সৃষ্টি হলো।

৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা উঠবে আগামী ১৩ মে। ভূমধ্যসাগরের তীরে দক্ষিণ ফরাসি উপকূলে এই মহাআয়োজন চলবে ২৪ মে পর্যন্ত।

কানসৈকতে ঠিক ৪০ বছর আগে প্রথমবার পা রেখেছিলেন জুলিয়েট বিনোশ। চার দশক পেরিয়ে প্রধান বিচারক হওয়ার অনুভূতিতে তিনি বলেন, ‘জুরি সদস্য ও দর্শকদের সঙ্গে জীবনের এসব অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। ১৯৮৫ সালে প্রথমবার আর দশজন অল্পবয়সী অভিনেত্রীর মতোই উৎসাহ-উদ্দীপনা ও কিছুটা অনিশ্চয়তা নিয়ে উৎসবটির সিঁড়ি বেয়ে উঠেছিলাম। কখনও ভাবিনি ঠিক ৪০ বছর পর জুরি প্রেসিডেন্টের সম্মানজনক দায়িত্ব পাবো। এই সুযোগ, দায়িত্ব ও বিনয়ের জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’

১৯৮৫ সালে অঁন্দ্রে তেশিনে পরিচালিত ‘রদেভ্যুঁ’ ছিল জুলিয়েট বিনোশের প্রথম মূল চরিত্র। এটি ৩৮তম কান উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয়। এজন্য তিনি প্রায়ই বলেন, ‘আমি কান উৎসবে জন্মগ্রহণ করেছি!’ একই বছর ৩৫তম বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত জ্যঁ-লুক গদারের ‘হেইল ম্যারি’ ছবিতে দেখা গেছে তাকে।২০১০ সালে আব্বাস কিয়ারোস্তামির ‘সার্টিফায়েড কপি’তে প্রাচীন জিনিসপত্রের ব্যবসায়ীর ভূমিকায় নৈপুণ্যের জন্য কানে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জয় করেন জুলিয়েট বিনোশ। উৎসবটির স্বর্ণপামের জন্য মনোনীত হয়েছে তার অভিনীত বেশ কিছু চলচ্চিত্র। এ তালিকায় রয়েছে দুইবার স্বর্ণপাম জয়ী অস্ট্রিয়ার মাইকেল হানেকে পরিচালিত ‘কোড আননোন’ (২০০০) ও ‘ক্যাশে’ (২০০৬), কানাডার ডেভিড ক্রনেনবার্গের ‘কসমোপলিস’ (২০১২), ফ্রান্সের অলিভিয়ের অ্যাসায়াস পরিচালিত ‘ক্লাউডস অব সিলস মারিয়া’ (২০১৪), ব্রুনো দুমোঁর ‘স্লেক বে’ (২০১৬), ফরাসি-ভিয়েতনামিজ নির্মাতা ট্র্যান আন হাং পরিচালিত ‘দ্য টেস্ট অব থিংস’ (২০২৩)। ২০০৭ সালে ৬০তম কানের আঁ সাঁর্তে রিগা বিভাগের উদ্বোধনী ছবি ছিল তাইওয়ানের হো সিয়াও সিয়েন পরিচালিত ও জুলিয়েট বিনোশ অভিনীত ‘ফ্লাইট অব দ্য রেড বেলুন’। এছাড়া কানের সমান্তরাল বিভাগ ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইটে তার ছবি নির্বাচিত হয়েছে একাধিকবার।