বিশ্বব্যাংকের টাকায় দখল করা জায়গায় মার্কেট করছে চসিক, ঘুমে গৃহায়ণ

প্রকাশিত: ১:১০ অপরাহ্ণ, মে ১১, ২০২৫

চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর এলাকায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের (জাগৃক) ১৮ কাঠার একটি জায়গা দখল করেছে সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। বর্তমানে জায়গাটিতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি বহুতল মার্কেট নির্মাণ করছে সংস্থাটি। তবে মূল্যবান এই জায়গাটি নিতে কোনো ধরনের টাকা পরিশোধ করেনি চসিক। এমনকি কাগজে-কলমে জায়গাটির মালিক জাগৃকের কোনো দপ্তরে অবহিতও করা হয়ন। প্রয়োজনীয় কাগজ না থাকায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে আইনানুযায়ী ভবন নির্মাণের অনুমতিও নিতে পারেনি চসিক।

জাগৃক কর্মকর্তাদের দাবি, তারা তাদের জায়গায় চসিকের ভবন নির্মাণ করার বিষয়টি জানেন না। যদিও গত কয়েক বছর ধরে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই, বিশ্বব্যাংককে ম্যানেজ করে বিনিয়োগ করানো এবং অবশেষে ঢাকঢোল পিটিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে চসিক। আবার এই প্রতিবেদক বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে হঠাৎ ঘুম ভাঙে জাগৃক কর্মকর্তাদের। পরবর্তী সময়ে তারা কাগজপত্র ঘেটে দেখা শুরু করে এবং জায়গাটিও পরিদর্শনেও যায়।

সম্প্রতি চসিককে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে জাগৃক। একই সঙ্গে জায়গা দখলের অভিযোগে চসিকের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় জাগৃক কর্মকর্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হালিশহর এলাকার আশপাশের দাম অনুযায়ী জায়গাটির মূল্য অন্তত ১০ কোটি টাকা। মূল্যবান এই জায়গাটিতে জেনেশুনে আইন ভেঙে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চসিক। এমনকি বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানকে এখানে বিনিয়োগও করিয়েছে। বিষয়টি জেনে কিছুটা অবাকও হয়েছেন জাগৃকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সিটি কর্পোরেশন ও জাগৃক চট্টগ্রামের কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, হালিশহর বি ব্লক কবরস্থানের পূর্ব পাশে জাগৃকের জায়গাটি বছরের পর বছর খালি পড়ে ছিল। মোটা অঙ্কের উৎকোচের শর্তে জায়গাটি সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের দেখিয়ে দেয় জাগৃকের চট্টগ্রামের কয়েকজন প্রকৌশলী। এক্ষেত্রে চসিককে আশ্বস্ত করা হয় জাগৃকের কেউ জায়গাটি কাজ করার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করবে না।

জাগৃক কর্মকর্তাদের আশ্বাসের বিষয়টি চসিকের অসাধু কয়েকজন প্রকৌশলী তৎকালীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মেয়র হওয়া রেজাউল করিম চৌধুরীকে অবহিত করেন। এরপর মেয়রও সেখানে বিনিয়োগ করতে উদ্যোগী হন। তবে তিনি প্রকল্পটি নিয়ে কাগজে-কলমে কাজ শুরু করলেও বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। সবশেষ গত বছরের ১৭ নভেম্বর ১৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বহুতল কিচেন মার্কেট কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, জায়গাটিতে পুরোদমে নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। প্রথম তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। লোকাল গভর্নমেন্ট কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রজেক্ট (এলজিসিআরআরপি) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এটিতে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। ১৪ নভেম্বর কাজ শুরু হয় এবং এটি মেয়াদ ধরা হয়েছে একবছর।

এদিকে হঠাৎ কোনো কাগজ ছাড়া ভবন নির্মাণের বিষয়টি জানাজানি হলে চসিক ও জাগৃক চট্টগ্রাম কার্যালয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। জাগৃক চট্টগ্রাম কার্যালয় থেকেও সেখানে জায়গাটি পরিদর্শন করা হয়।

জাগৃক চট্টগ্রামের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নেজামুল হক মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, জায়গাটিতে আগে কাউন্সিলর অফিস করতেন। পরবর্তী সময়ে তারা এটিতে বহুতল মার্কেট করছেন। আমাদেরকে তারা জানাননি। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় বাধা দেওয়া যায়নি। এখন আমরা নোটিশ দিয়েছি। তবে এটিতে কাজ হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই আমরা কাজ বন্ধ করার জন্য আগামী সপ্তাহে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করে দেব।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জায়গাটি দিনে দিনে দখল হয়েছে বিষয়টি এরকম নয়। এখানে আগে কাউন্সিলর অফিস করতেন। এখন আমরা মার্কেট করছি। এখন আমাদের জায়গা তো বেশি নেই। এটি আমাদের প্রয়োজন। তবে এভাবে নেওয়াটা আমাদের উচিত হয়নি। প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত ছিল।

সিডিএ থেকে ভবনের নকশা অনুমোদনের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সিডিএ (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) থেকে সচরাচর অনুমোদন নিই না। কারণ আমাদের নিজস্ব ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ রয়েছে।

জাগৃক চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. নুরুল বাসির ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি শুনেছি। চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা আমাকে জানিয়েছেন তারা সিটি কর্পোরেশনকে নোটিশ দিয়েছেন। তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য বলে দিয়েছি। বিষয়টি আমি মন্ত্রণালয়েও জানিয়েছি। এখন সিটি কর্পোরেশন আমাদের বলছে জায়গাটি তাদের দরকার। যদি দরকার হয়, তবে জায়গা নেওয়ার প্রক্রিয়া আছে। সে অনুযায়ী তারা নেবে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চসিকের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে জানতে কল করা হলেও তার নম্বরে সংযোগ পাওয়া যায়নি। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হলে তিনি দেশ ছেড়ে চলে যান।