ইইউ বাংলাদেশে বৃহৎ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে: রাষ্ট্রদূত মিলার

প্রকাশিত: ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০২৫

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য একটি বৃহৎ প্রতিনিধি দল পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। ২০০৮ সালের পর এটিই হবে ইইউর প্রথম পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন।

গতকাল (২৮ অক্টােবর, ২০২৫) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এ তথ্য জানান।

রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের অনুমোদন প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এতে ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য থাকতে পারেন—যাদের মধ্যে কেউ কেউ ভোটের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে এবং বাকিরা ভোটের এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে আসবেন।

তিনি উল্লেখ করেন, “২০০৮ সালের পর এই প্রথম ইইউ বাংলাদেশে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল পাঠাচ্ছে।” রাষ্ট্রদূত আরও জানান, নির্বাচনের সময় স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও ইইউ সহযোগিতা করবে।

প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী এই বৈঠকে উভয় পক্ষ সাংবিধানিক সংস্কার, নির্বাচন প্রস্তুতি, বিচার বিভাগ ও শ্রম খাতের উন্নয়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক এবং সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।

রাষ্ট্রদূত মিলার জুলাই জাতীয় সনদকে একটি ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এটি গণতান্ত্রিক পরিবর্তনকে আরও সহজ ও স্থিতিশীল করবে। তিনি শ্রম আইন সংস্কার এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা জোরদারে নেওয়া সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

তিনি আরও বলেন, “এসব উদ্যোগ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ,” এবং ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য করতে ইইউ নির্বাচন কমিশনকে ধারাবাহিকভাবে সহায়তা করবে। মিলার আসন্ন নির্বাচনকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবেও উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, ইইউ বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় সহায়তা অব্যাহত রাখবে।

বৈঠকে উভয় পক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। এর মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি, বিমান ও নৌ পরিবহন খাতে নতুন সম্ভাবনা অনুসন্ধান, এবং মানব পাচার ও অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারের বিষয়গুলো উঠে আসে। প্রধান উপদেষ্টা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া টার্মিনাল উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য বৈশ্বিক শিপিং কোম্পানি এ.পি. মোলার-মায়ার্সকের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে।

রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ডেনমার্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে লালদিয়া টার্মিনালকে এ অঞ্চলের অন্যতম আধুনিক স্থাপনায় রূপান্তর করার পরিকল্পনা নিয়েছে। বৈঠকে নির্বাচনী পরিবেশ, প্রার্থীদের যোগ্যতা এবং মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।