ফ্যাটি লিভার কী? যারা ঝুঁকিতে আছেন… প্রকাশিত: ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০২৪ চাকরির জন্য রুটিন রক্তপরীক্ষার রিপোর্টে দেখা গেল- আপনার লিভারে এনজাইমের মাত্রা বেশি আছে কিংবা ধরুন, অন্য কোনো কারণে আল্ট্রাসাউন্ড করার সময় সনোলজিস্ট জানালেন, আপনার লিভারে চর্বি জমেছে। এরকম একটা খবর শুনলে আমরা অনেকেই দিশেহারা হয়ে পড়ি। অথবা ধরেন, এই খবর আপনি আপনার কলিগকে বললেন, তিনি বললেন, ‘আরে এটা কোনো ব্যাপার হলো না কী? ভেতো বাঙালির- এটা একটু-আধটু থাকেই।’ ব্যাপারটা কী আসলেই এতো সহজ? আসুন জেনে নিই, লিভারে চর্বি জমা হওয়া রোগটি সম্পর্কে। ফ্যাটি লিভার কী ফ্যাটি লিভার রোগটির ইতিহাস অনেক পুরোনো। এক সময় দেখা যেত, মদ্যপায়ীদের লিভারে চর্বি বেশি থাকে। সেখান থেকে এর নাম দেওয়া হলো Alcoholic Fatty Liver Disease। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ, যাদের মদ্যপানের অভ্যাস নেই, তাদের লিভারও চর্বি দিয়ে আক্রান্ত। সেখান থেকে এই শ্রেণির মানুষদের জন্য, এটার নাম হলো Non-Alcoholic Fatty Liver Disease। ধীরে ধীরে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে, এটি হয়ে দাঁড়ালপৃথিবীব্যাপী দীর্ঘমেয়াদি লিভারের অসুখের প্রধান কারণ। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এই রোগের পেছনের কারণ খুঁজতে খুঁজতে- বিপাকক্রিয়ার গোলযোগোর অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে দেখা দিল। তাই বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে MASLD (Metabolic Dysfunction Associated Steatotic Liver Disease) বলা হয়। সহজ ভাবে বললে, লিভারে চর্বির (লিভারের ওজনের শতকরা ৫ ভাগ) উপস্থিতি তারসঙ্গে যেকোনো একটি বিপাকীয় (Metabolic) রিস্ক ফ্যাক্টর (স্থূলতা, প্রেশার, ডায়াবেটিস বা রক্তে অতিরিক্ত চর্বি) থাকা মানেই ফ্যাটি লিভার। ফ্যাটি লিভারের কারণ কী লিভারে চর্বি জমার কারণের একটা লম্বা লিস্ট আছে। যেমন ধরুন- মদ্যপান, হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের ইনফেকশন, লিভারের জিনগত কিছু অসুখ, কিছু ওষুধের ব্যবহার, গর্ভাবস্থা, অপুষ্টি, এমন কী খুব দ্রুত ওজন কমাসহ আরও কিছু কারণে লিভারে চর্বি জমে। তবে বিপাকীয় গোলযোগের কারণে, লিভারে যে চর্বি জমে, তার প্রধান কারণ হচ্ছে- ইনসুলিন নামের একটা হরমোনের কাজ করার অক্ষমতা। যার পিছনে রয়েছে- অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা। তাই, স্থূলকায় ডায়াবেটিসের রোগীদের শতকরা ৭৫ জন ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হন। তবে, লিভারে চর্বি জমার কারণ যেহেতু অনেকগুলো, তাই চিকিৎসার আগে অন্য রোগগুলোকে বাদ দেওয়ার জন্য অনেকসময় চিকিৎসকদের ল্যাবের সাহায্য নিতে হয়। লক্ষণ কী ও ঝুঁকিতে আছেন কারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভারের কোনো লক্ষণ হয় না। রুটিন পরীক্ষা নিরীক্ষা বা অন্য কোনো কারণে পরীক্ষা করাতে গিয়ে ফ্যাটি লিভার ধরা পড়ে। তবে, এ রোগে আক্রান্ত রোগীরা কখনো কখনো- অবসাদ ও দুর্বলতার কথা বলে থাকেন। অসুখটি আরও অগ্রসর হলে- পেটের ডানপাশে ব্যথা, পেটে চাকার অনুভব, জন্ডিস, রক্তবমি, এমন কী কালো পায়খানা- নিয়ে রোগটি লক্ষণ প্রকাশ করে। নাম থেকে বোঝা যায় যে স্থূলকায় মানুষ এই রোগের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন। এর সঙ্গে এমন কিছু জীবনাচরণ যেগুলো স্থূলতাকে বাড়িয়ে দেয় যেমন: অতিরিক্ত তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, যথেষ্ট কায়িক পরিশ্রম না করা এসব কারণে লিভারে বেশিবেশি চর্বি জমে। এছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও রক্তে কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা এই রোগের উচ্চঝুঁকিতে থাকেন। লেখক: এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), রেসিডেন্ট, বিএসএমএমইউ SHARES স্বাস্থ্য বিষয়: এনজাইমেররক্তপরীক্ষার