চীনে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা নিয়ে আশা কতটা প্রকাশিত: ১২:১৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৬, ২০২৫ বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে চায় চীন। চীনের কুনমিংয়ের চারটি হাসপাতালকে বাংলাদেশিদের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছে সেদেশের সরকার। এরই মধ্যে বাংলাদেশের রোগী, চিকিৎসক, পর্যটন প্রতিষ্ঠানসহ চিকিৎসা খাতের একটি দল চীনের কুনমিং ঘুরে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশিদের দেশের বাইরে সবচেয়ে স্বস্তির গন্তব্য ভারত। জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনের পর প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে পুরনো সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়, যার প্রভাবে বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়ায় কড়াকড়ি আরোপ করে ভারত। সীমিত পরিসরে চিকিৎসা ভিসা দিলেও তাতে অস্থিরতা দূর হচ্ছে না। এমন সুযোগে চীন সরকার এগিয়ে আসায় বাংলাদেশিদের চিকিৎসার জন্য দেশটি ভালো গন্তব্য হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় চীনের তিনটি সরকারি এবং একটি বেসরকারি হাসপাতাল বাংলাদেশিদের চিকিৎসার জন্য ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলো হচ্ছে, দ্য ফার্স্ট পিপলস হসপিটাল অব ইউনান প্রভিন্স, দ্য ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হসপিটাল অব কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, চায়নিজ একাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্সেসের ‘ফাওয়াই ইউনান হসপিটাল’ এবং ট্র্যাডিশনাল চায়নিজ মেডিকেল হসপিটাল (টিএমসি)। সেখানে চিকিৎসা সুবিধা দেখতে গত ১০ মার্চ বাংলাদেশি রোগীদের প্রথম দল কুনমিং যায়। ওই দলের সফরসঙ্গী হয়েছিলেন চিকিৎসক, ট্র্যাভেল এজেন্ট, সাংবাদিকরাও। তবে চীনের হাসপাতালে বাংলাদেশিরা কী কী সুবিধা পাবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীনে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভাষাগত সমস্যা, অতিরিক্ত বিমানভাড়াসহ কিছু বিষয় বাধা হতে পারে। সেগুলো দূর করতে পারলে বাংলাদেশি রোগীদের জন্য ভালো গন্তব্য হতে পারে চীন। কেমন চিকিৎসা, খরচ কেমন চীনে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। এ কারণে সেখানে খরচ কেমন হবে তাও স্পষ্ট নয়। তবে চীন ঘুরে আসা রোগীরা বলছেন, সেখানকার খরচ তুলনামূলক কম। মার্চ মাসে বাংলাদেশ থেকে কুনমিং যাওয়া প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন সংগীত শিল্পী হায়দার হোসেন। হৃদরোগ ছাড়াও ঘাড়ের ব্যথায় ভুগছেন তিনি। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে হায়দার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চীনের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো, তুলনায় খরচ কম হয়েছে তার। “আমি হার্টের চিকিৎসা করিয়েছি। ঢাকায় আমাকে ৩-৪ লাখ টাকা খরচ করতে হত। সেখানে আমার চিকিৎসা, থাকা-খাওয়াসহ খরচ হয়েছে এক হাজার ডলারের মত। এই খরচটা বিমান ভাড়া বাদে। বড় বিষয় হল তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, রোগী ব্যবস্থাপনা বেশ ভালো, ঢাকায় যেটা হয় না। আমাদের এখানে যন্ত্রপাতি আছে, কিন্তু বিহাইন্ড দ্য মেশিন লোক তো ঠিক না। গাড়ি আছে, গাড়ির ড্রাইভার ভালো না, বিষয়টা এমন আরকি।” তার পরামর্শ, “রোগীদের বিদেশে যাওয়া ঠেকাতে ব্যবস্থাপনা ভালো করতে হবে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে।” প্রস্টেটে সমস্যার চিকিৎসা করাতে সম্প্রতি চীন ঘুরে এসেছেন আজিজুল হাকিম। তিনি বলেছেন, ছেলে থাইল্যান্ডে থাকায় সেখানে প্রায়ই যান তিনি। প্রস্টেট সমস্যা নিয়ে থাইল্যান্ডের চিকিৎসকের কাছে গেলে অস্ত্রোপচার করাতে বলেছিলেন তারা। কিন্তু খরচ বেশি হওয়ায় সেখানে অস্ত্রোপচার করেননি। দেশে ফিরে আবার যাওয়ার ভিসাও পাচ্ছিলেন না। এক বন্ধুর সহায়তায় মার্চ মাসে চীনের কুনমিংয়ে যান তিনি। সেখানে দ্য ফার্স্ট পিপলস হসপিটাল অব ইউনান প্রভিন্সে চিকিৎসা নেন। আজিজুল হাকিম বলেন, “তারা আমাকে থরো ইনভেস্টিগেশন করেছে। খরচ ছিল আমাদের দেশের অলমোস্ট সমান, কিন্তু মানের দিক থেকে আন্তর্জাতিক মানের। আমি জার্মানি ছিলাম, থাইল্যান্ডেও চিকিৎসা নিয়েছি এ কারণে জানি। আমার কাছে ১১০০ ইউয়ান অর্থাৎ প্রায় ১৭ হাজার টাকা নিল, থাইল্যান্ডে হলে ৩ লাখ টাকার মত লাগত। আমার কোনো অস্ত্রোপচার লাগেনি, চিকিৎসকরা বলেছেন আপাতত ওষুধ খেলেই হবে।” তবে তার মতে, কুনমিংয়ের বিমান ভাড়া অনেক বেশি। এটা কমাতে না পারলে রোগীরা সেখানে গিয়ে সুবিধা করতে পারবে না। মেডিকেল ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান সিওক হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী এম এম মাসুমুজ্জামান বলছেন, চীনে দুই ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি ব্যবহার হয়; আধুনিক এবং চীনের প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি। “তারা মডার্ন মেডিসিন এবং ট্র্যাডিশনাল চায়নিজ মেডিসিনের কম্বিনেশন করে চিকিৎসা দেয়। একজন ক্যান্সারের রোগী, পাশাপাশি হয়ত ব্যাকপেইনের কারণে তার অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। ওরা ব্যাকপেইনের চিকিৎসা করছে আকুপাংচারের মত ট্র্যাডিশনাল চায়নিজ মেডিসিনের মাধ্যমে। এতে ক্যান্সারের মেডিসিন ব্যবহার করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এটা অনেক বড় সুবিধা।” আরেক মেডিকেল ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান ট্র্যাক মেডি সার্ভিসেসের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল হাসানের ভাষ্য, চীন চিকিৎসা ব্যবস্থায় যেসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, কিছু ক্ষেত্রে তা থাইল্যান্ডের চেয়েও ভালো। সেখানে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ কম বলে জানালেন পেশায় চিকিৎসক রাশেদুল হাসান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটা হাসপাতালে ব্লাড শুগার পরীক্ষার খরচ কমপক্ষে ২০০ টাকা। চীনের যে হাসপাতালে তারা গেছেন, সেখানে খরচ বাংলাদেশি টাকায় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। চীন যাবেন যারা বাংলাদেশ থেকে চীনে চিকিৎসার জন্য কেউ যায় কি না, কিংবা বছরে কত জন যায়, তার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশে চীনের দূতাবাসও এ বিষয়ে তথ্য দিতে পারেনি। সিওক হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী এম এম মাসুমুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য চীনে যাওয়া রোগীর সংখ্যা কম। ব্যবসার কাজে, বেড়াতে বা পড়াশোনা করতে যারা চীনে গেছেন, তাদের স্বজনদের অনেকে চীনে চিকিৎসা নেন। তবে সেই সংখ্যা খুবই কম। ভারতের ভিসা কড়াকড়ির পর চীনের কথা ভাবতে শুরু করেছেন অনেকে। তার দাবি, মূলত ভারত ও থাইল্যান্ডগামী রোগীদের একটা অংশ চীনে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী। SHARES স্বাস্থ্য বিষয়: চিকিৎসারমেডিকেলহসপিটাল