২০২৫ সালে যেভাবে আরও সুখী হয়ে ওঠতে পারেন প্রকাশিত: ১২:৩৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২৫ সুখ শুধু একটা আবেগ তা কিন্তু নয়। আমাদের ধারণা সুখ-দুঃখ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নিজের কাছে থাকে না। তবে বিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা। গবেষণায় উঠে এসেছে চাইলেই জীবনটাকে আরও সুখী করা সম্ভব। নতুন বছরে কীভাবে পুরোনো জরাজীর্ণ জীবনটাকে পাল্টানো যায়-এরই একটি বিজ্ঞানভিত্তিক পথ দেখানোর চেষ্টা এই লেখায়। বয়স বাড়লেও নতুন বন্ধু বানান জীবনের যেকোনো পর্যায়েই বন্ধুত্ব গুরুত্বপূর্ণ। বয়সের সঙ্গে মানুষের বন্ধুর চাহিদাও বাড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বয়স্করা পরিবার নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে এ সময় বন্ধু থাকা খুবই জরুরি। পরিবারের প্রতি একতা দায়বদ্ধতা থাকে, কিছু কর্তব্য পালন করতে হয়। অন্যদিকে বন্ধুত্বে কর্তব্য কম থাকে। যখন ইচ্ছে হলো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করলেন, আড্ডা দিলেন – এভাবে মানসিক চাপ কমে। এ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, ‘বৃদ্ধ বয়সে বন্ধুত্ব শক্ত থাকলে মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিস্থিতি ভালো থাকে।’ আপনার যদি নতুন মানুষের সঙ্গে মিশতে ভালো না লাগে, অস্বস্তি লাগে- তকে কাঙ্ক্ষিত মানুষকে অভিনব কোনো অভিজ্ঞতার অংশ করার চেষ্টা করুন। অন্যের সুখে খুশি হওয়ার চেষ্টা করুন গভীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে সহমর্মিতাকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়। সবার একই কথা- সম্পর্ক ভালো রাখতে হলে মানুষের দুঃখে পাশে থাকতে হয়। তবে, আমরা ভুলে যাই যে, সুখের সময়েও পাশে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। বিবিসির সংবাদকর্মী ড্যাভিড রবসনের মতে, বন্ধুর কাছে কোনো খুশির সংবাদে আপনিও আনন্দিত হলে সম্পর্ক আরও জোর পায়। অন্যদিকে বন্ধু আপনাকে ‘দুধের মাছি’ ভাববে মনে করে তার কোনো খুশির সময় আপনি বৈরাগ্য দেখালে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অর্থপূর্ণ কোনো কাজে স্বেচ্ছাশ্রম দিন অন্যের সাহায্য করলে মানসিক তৃপ্তি পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘমেয়াদী মানসিক কষ্টে ভোগা অনেকেই স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে কষ্ট কিছুটা কমাতে পেরেছেন। এমনকি চিকিৎসরাও মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাশ্রমের পরামর্শ দেন। ২০২৫ সালে আপনি চাইলে পথশিশুদের জন্য সাপ্তাহিক স্কুলে দুই ঘণ্টা বাচ্চাদের পড়াতে পারেন অথবা শীতার্তদের কল্যাণে নিয়োজিত কোনো সংস্থার হয়ে কাজ করতে পারেন। আপনার মানসিক টানাপোড়েন হয়তো সেরে যাবে না। তবে দুঃখ কিছুটা হলেও কমবে। পারিবারিক ইতিহাস জানার চেষ্টা করুন নিজের পারিবারিক ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত থাকার বেশ কিছু মানসিক উপকারিতা আছে। মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক সুজান এম মুর এক গবেষণায় আবিষ্কার করেছেন, পূর্বপুরুষদের ইতিহাস জানলে মনে এক ধরণের প্রশান্তি অনুভব করা যায়। তাই জগতে আপনার অবস্থান জানার মাধ্যমে জীবনের প্রতি আরও আত্মনিয়ন্ত্রণ ও কৃতজ্ঞতা অনুভব করতে আপনার পরিবারের ইতিহাস জানার চেষ্টা করুন। জীবনের ভালো দিকগুলো মনে রাখুন প্রতিদিন নিজের জীবনের তিনটি ভালো দিক লিখে রাখলে মন ভালো থাকে। ভালো বিষয়গুলো যত ছোটই হোক, নিয়মিত সহজ-সুন্দর বিষয়গুলো একবার করে মনে করলে নিজের জীবনটাকে আর এত কঠিন মনে হয় না। এভাবে আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। আশেপাশের মানুষের কাছেও আপনার অবস্থান দৃঢ় হয়। মজার কিছু করার চেষ্টা করুন মজার অভিজ্ঞতা আমাদের মনে ইতিবাচক প্রভাব রাখে। শহুরে যান্ত্রিক ব্যস্ততায় আনন্দের কিছু করাকে বিলাসিতা মনে হলেও নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এর বিকল্প নেই। সারাক্ষণ গুরুগম্ভীর হয়ে থাকলে শরীরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই, মাঝেমধ্যে মজার কিছু করার চেষ্টা করুন। সেটা হতে পারে আশেপাশে কোথাও ঘুরে আসা, বা বন্ধুদের সঙ্গে বারবিকিউ করে খাওয়া। আনন্দের অভিজ্ঞতা যে শুধু ওই সময়েই আবদ্ধ তা কিন্তু নয়। সময়টা পার হয়ে গেলেও শরীর ও মনের ওপর অভিজ্ঞতার প্রভাব থেকে যায়। ইঁদুরদের ওপর এক গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ভালো খাবারের অপেক্ষায় থাকা ইঁদুররা অন্য ইঁদুরের তুলনায় বেশি সতস্ফূর্ত থাকে। মানুষের মনও একইরকম। নিজের মন ভালো রাখার জন্য নিয়মিত মজার কিছু করলে মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। মাঝেমাঝে কিছু না করাটাই আসল সমাধান মজার ব্যাপার হলো, মাঝেমাঝে সুখ খুঁজতে গিয়েই মানুষ অসুখী হয়ে পড়েন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো অনুষ্ঠান অনেক ভালো কাটবে আশা করতে গিয়ে মনমতো না হওয়ায় অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন। এ প্রসঙ্গে মনোবিজ্ঞানী আইরিস মওসের বক্তব্য, আমাদের উচিত ‘স্টইক’ মানসিকতা ধারণ করা। অর্থাৎ কোনোকিছুর ওপর প্রত্যাশা না রাখা। এভাবে আশানুরূপ ফল না পেলেও মন খারাপ হবে না। চা-কফি নিয়ন্ত্রণ করুন কাজের মাঝখানে ঘুম পেলে আমরা চা-কফি খাই। এসবের ক্যাফেইন আমাদের শরীরের বেশ কিছু উপকার করে। তবে শরীরে কখন ক্যাফেইন ঢুকছে- সে সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। সকালে এককাপ চা খেলে দিনের কর্মক্ষমতা বাড়ে। কিন্তু ঘুমানোর আগে কফি খেলে রাতের ঘুমটাই মাটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, চা-কফি যা খাওয়ার সব ঘুমানোর আট ঘণ্টা আগেই খেয়ে নিতে হবে। এই সময়ের পর খাওয়া শরীর ও মনের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া দিনে ৪০০ (২-৩ কাপ) গ্রামের বেশি ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় পান করতে বারণ করেন তারা। আমরা সবাই একটা সুস্থ, আনন্দের জীবন চাই। তবে মনে রাখতে হবে, প্রত্যেকের কাছেই সুখের সংজ্ঞা আলাদা। ওপরের আলোচনা সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে কিছু পরামর্শ মাত্র। তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণাভিত্তিক হওয়ায় এই উপায়গুলো অবলম্বনের মাধ্যমে আপনার এই বছরটিকে তুলনামূলক আনন্দদায়ক করতে পারেন। সূত্র: বিবিসি SHARES স্বাস্থ্য বিষয়: নিয়ন্ত্রণেরমানসিকসম্ভব