রমজানে তীব্র কোমরব্যথায় করণীয়

প্রকাশিত: ২:১৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ২, ২০২৫

এলো পবিত্র মাহে রমজান। এ মাসের ফজিলত অনেক। কিন্তু যারা অসুস্থ, বিশেষ করে কোমরব্যথার রোগী, তাদের জন্য তারাবির নামাজ আদায় করা একটু কঠিন হয়ে পড়ে। কোমরে ব্যথা হলে তা কোমর থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের মেরুদণ্ডের দুই কশেরুকা। এর ভেতর যে ফাঁকা অংশ থাকে, সেটির নাম ডিস্ক। এটি যদি কোনো কারণে জায়গা থেকে সরে যায়, তখন তাকে ডিস্ক প্রলাপস বা পিএলআইডি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মেরুদণ্ডের সঙ্গে যে স্পাইনাল লিগামেন্ট ও মাংসপেশি থাকে, সেগুলো দুর্বল হয়ে গেলে এমনটা হতে পারে। অসচেতনভাবে সামনের দিকে ঝুঁকে কোনো ভারী বস্তু তুলতে গেলে, উঁচু স্থান থেকে পড়ে গেলে, সড়ক দুর্ঘটনা, দীর্ঘক্ষণ বসে একই অবস্থানে থাকলে, এমনকি সামনের দিকে ঝুঁকে জুতার ফিতা বাঁধতে গেলে বা বেসিনে হাতমুখ ধুতে গেলেও ডিস্ক সরে যেতে। পারে। সাধারণত লাম্বার ফোর ও ফাইভ অংশে বেশির ভাগ সময় ডিস্ক প্রলাপস হয়ে থাকে। নারীরা এ রোগে বেশি ভুগে থাকেন। ডিস্ক প্রলাপস শুধু কোমরেই হয় না, ঘাড়ে বা পিঠের যে কোনো অংশে হতে পারে। যদি ঘাড়ের মেরুদণ্ডে ডিস্ক প্রলাপস হয়, তবে ঘাড়ের ব্যথা ক্রমেই হাতের দিকে ছড়িয়ে পড়বে ও তীব্র ব্যথা হবে। হাত ঝুলিয়ে রাখলে বা এক কাতে বিছানায় শুয়ে থাকলেও তীব্র ব্যথা অনুভব করতে পারেন। সঙ্গে হাত ঝিঁঝি বা অবশ মনে হবে, হাতের শক্তি ধীরে ধীরে কমবে ও দুর্বল হয়ে আসবে। অনেক ক্ষেত্রে হাতের মাংসপেশি শুকিয়ে যেতে পারে। ডিস্ক প্রলাপস কোমরে হলে ব্যথা কোমর থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা হাঁটলে ব্যথা বেড়ে যায়, হাঁটার সক্ষমতা কমে যায়। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে একটু ভালো লাগে। পায়ে জ্বালাপোড়া বা ঝিঁঝি অনুভব হতে পারে, পায়ে শক্তি কমে যেতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে পায়ের মাংসপেশি শুকিয়ে যেতে পারে। রোগের তীব্রতা বেশি হলে প্রস্রাব ও পায়খানা চলে যেতে পারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

করণীয় : এ সমস্যায় আক্রান্তদের উচিত, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। কারণ তারাবির নামাজ কীভাবে পড়বেন, তা জানা না থাকলে রোগটির কারণে আরও বেশি সমস্যায় পড়ে যেতে পারেন। কোমরব্যথার ক্ষেত্রে সাধারণত চিকিৎসরা ব্যথানাশক ওষুধের পাশাপাশি সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাতে অনেক সময় ব্যথা থেকে অনেকাংশে মুক্তি মেলে। চিকিৎসকের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শমতো নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চললে এবং তার দেখিয়ে দেওয়া ব্যায়াম করা সম্ভব হলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে কখনো কখনো অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। তাই কিছু সাবধানতাও অবলম্বন করতে হবে। যেমন- সামনের দিকে ঝুঁকে গিয়ে ভারী কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ভারী ওজনের কিছু বহন করা যাবে না। শোবার সময় আরামদায়ক বিছানা ব্যবহার করতে হবে। ভ্রমণ ও হাঁটাচলার সময় কোমরে সাপোর্ট বা লাম্বার কোরসেট ব্যবহার করতে হবে। ভ্রমণের সময় গাড়ির মাঝামাঝি অংশে বসতে হবে। হালকা গরম পানির সেঁক নিতে হবে।

লেখক : চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট রিঅ্যাকটিভ ফিজিওথেরাপি সেন্টার, ফিনিক্স টাওয়ার শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ অ্যাভিনিউ, তেজগাঁও (সাতরাস্তা) ঢাকা। ০১৭১৬453205